• ঢাকা,বাংলাদেশ
  • বুধবার | ৩১শে মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | গ্রীষ্মকাল | রাত ৩:৪৯
  • আর্কাইভ

সবক্লাসেই শিক্ষকের চেয়ার খালি, ক্লাসভর্তি শিক্ষার্থী

৩:৩৫ অপরাহ্ণ, এপ্রি ০২, ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক : নদীর ওই পাড়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের একমাত্র শিক্ষক মো. জসিম উদ্দিন তিনি থাকেন এই পাড়ে শহরে। নদী পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয় যেতে তার অনিহা। মাসে ২/৩ দিন বিদ্যালয়ে গেলেও নির্ধারিত সময়ের আগেই স্কুল ছেড়ে শহরে ফিরেন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষা বঞ্চিত হচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীরা।

লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার মেঘনার বুকে জেগে উঠা চর আবদুল্লাহ ইউনিয়ন। ওই ইউনিয়নের একটি অবহেলিত গ্রাম তেলির চর। চরের জনতা বাজার সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত চর সেবেজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

এর আশেপাশে প্রায় ২শ’ পরিবারের বসবাস। ওইসব পরিবারের শত-শত শিশুর একমাত্র জ্ঞান অর্জনের মাধ্যম বিদ্যালয়টি। তবে বিদ্যালয় থাকলেও নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক। মাত্র একজন সহকারী শিক্ষক থাকলেও নিয়মিত উপস্থিতি নেই তার। এতে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে পড়া-লেখা।

জানা গেছে, মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনে ২০১৭ সালের মাঝামাঝিতে চর সেবেজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বিলীন হয়ে যায়। জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমানের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত জনতা বাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চর সেবেজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করা হয় দেড় বছর পর ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে। ওই সরকারি বিদ্যালয়টিতে ৫জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ১জন সহকারী শিক্ষক। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. জসিম থাকেন উপজেলা সদর আলেকজান্ডারে। বিদ্যালয় বিলীন হয়ে যাওয়ার পর দীর্ঘ প্রায় দেড় বছরেরও বেশি সময় তিনি দায়িত্ব পালন ছাড়াই বেতন ভাতা ভোগ করেছেন। ফের বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম চালু হলে তিনি বদলির জন্য আবেদন করেন। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ তাকে ওই বিদ্যালয়ে রাখায় তিনি নদী পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয় যেতে নারাজ। প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে পাঠ দান করিয়ে আসছেন স্থানীয় বাসিন্দা অতিথি শিক্ষিক মো. আবদুর রহমান।

সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সবক্লাসে শিক্ষকের চেয়ার খালি, ক্লাসভর্তি শিক্ষার্থীরা জানান, তারা নিয়মিত স্কুলে আসলেও জসিম স্যার আসেন না। গত চার মাসে স্যার আসছেন মাত্র ৮/৯দিন। তবে স্কুল ছুটির আগেই তিনি চলে গেছেন। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় ও যিনি দায়িত্বে আছেন তিনি নিয়মিত না আসায় তাদের পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন শিশুরা।

অভিভাবকরা জানান, যাতায়াতের অসুবিধার কারণে স্থানীয়ভাবে উদ্যোগ নিয়ে ওই শিক্ষককে বিদ্যালয়ে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তবুও তিনি বিদ্যালয়ে আসেন না। তিনি থাকেন উপজেলা সদর আলেকজান্ডার শহরে।

অতিথি শিক্ষক আবদুর রহমান বলেন, লক্ষ্মীপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমানের প্রচেষ্টা ও উদ্যোগে জনতা বাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা  করা হয়। আমি ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক।  নদী ভাঙনের কারণে চর সেবেজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি গত বছরের ডিসেম্বরে এখানে স্থানান্তরিত হয়। আমি এতে অতিথি শিক্ষক হিসাবে পাঠদান করিয়ে আসছি।

চর সেবেজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জসিম উদ্দিন বলেন, বিদ্যালয় যেতে সকাল ৭টায় আলেকজান্ডার থেকে নৌকায় উঠতে হয়। যেতে যেতে তিনঘন্টা, ওই পথে পারাপারে একটিমাত্র নৌকা থাকায় ফের দুপুর ১২ টায় ওই নৌকায় উঠতে হয়।  যে কারণে নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত হওয়া সম্ভব হয় না। বিদ্যালয় গেলেও নির্ধারিত সময়ের আগেই ফিরতে হয়।

এ বিষয়ে জানতে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ ও রামগতি উপজেলার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা এটিএম এহচানুল হক চৌধুরীর সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।

রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রফিকুল হক বলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষকের অনুপস্থিতি ও শিক্ষক সংকটের বিষয়ে খোজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Spread the love

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ



Design & Developed by Md Abdur Rashid, Mobile: 01720541362, Email:arashid882003@gmail.com