• ঢাকা,বাংলাদেশ
  • রবিবার | ৪ঠা জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | গ্রীষ্মকাল | রাত ৩:১৫
  • আর্কাইভ

লক্ষ্মীপুরে মার খেয়েও অভিযু্ক্ত হলেন এডিসি

১:০১ অপরাহ্ণ, ডিসে ১০, ২০১৭

স্টাফ রিপোর্টার : গত ৪ঠা ডিসেম্বর ২০১৭ইং সোমবার লক্ষ্মীপুরে পাবলিক সার্ভিসের ইতিহাসে এক দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। এদিন লক্ষ্মীপুরের এডিসি জেনারেল শেখ মুর্শিদুল ইসলাম জেলা প্রশাসন পরিচালিত কাকলি শিশু অঙ্গণ স্কুলের কচি-কাঁচা শিশুদের সামনে প্রকাশ্যে কিল, ঘুষি ও থাপ্পড় খেয়েছেন। লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের প্রাক্তন আরএমও এবং বিভিন্ন সময়ে ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জনের দায়িত্ব পালনকারী ড্যাব নেতা ডাঃ সালাহ উদ্দিন শরীফ ও তার পুত্র মিনহাজ এডিসিকে মেরেই ক্ষান্ত হয়নি; তাদের কিল-ঘুষি,চড় থাপ্পড়, টানা-হেঁচড়া ও গালমন্দে হতবিহবল এডিসি শেখ মুর্শিদকে কাকলি স্কুলের শিক্ষক, অভিভাবক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা যখন স্কুলের ভিতরে নিয়ে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসিয়ে নানাভাবে শান্তনা দেবার চেষ্টা করছিলেন সে সময় সেখানে গিয়েও এডিসিকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে মিনহাজ। শুধু তাই নয়; সেখানে এডিসি বসে থাকা চেয়ারে লাথি মেরে তাঁকে ফেলে দেবার চেষ্টাসহ আরেকটি চেয়ার উঠিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করার চেষ্টা করেন ডাঃ সালাহ উদ্দিনের পুত্র মিনহাজ (২৫)। শিক্ষিকা হাসিনা আক্তার মিনহাজকে ঝাপটে ধরে এডিসিকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেন।

এ ঘটনায় ডাঃ সালাহ উদ্দিন শরীফকে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও লক্ষ্মীপুর সদরের ইউএনও নুরুজ্জামান। ঘটনাস্থলে এ দন্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও পরীক্ষায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় ডিসি অফিসে নিয়ে অভিযুক্তকে রায় শোনানো হয়। ঘটনার মূল নায়ক ডা: শরীফের পুত্র মিনহাজ তাৎক্ষণিক পালিয়ে যাওয়ায় তার শাস্তির সিদ্ধান্ত এখনো হাওয়ায় ঝুলে রয়েছে। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, একজন এডিসিকে শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করা হলে অভিযুক্ত যেই হোক তাকে দন্ড দেয়া ছাড়া প্রশাসনের কিইবা করার থাকে।

ওই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী কাজল, ইকবাল হোসাইন সোহাগ, মোহাম্মদ বাবুল, আবদুল জলিল, অধ্যাপক ইউসুফ মাহমুদ, কনক সরকার, মহি উদ্দিন, হাসিনা আক্তার ও হরিবন্ধুর সাথে কথা বলে জানা যায়, ৪ঠা ডিসেম্বর কাকলি স্কুলে বর্ষিক পরীক্ষা চলছিল। ডাঃ সালাহ উদ্দিনের দ্বিতীয় সংসারের পুত্র আবির কাকলি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। সকাল ৮.৪৫ টার সময় ডাঃ সালেহ উদ্দিন তার প্রথম সংসারের পুত্র মিনহাজ (২৫), মেয়ে কলেজ ছাত্রী নাদিয়া জাফরিন চাঁদনী (১৭) এবং দ্বিতীয় সংসারের পুত্র আবিরকে (৮) নিয়ে নিজের প্রাইভেট কার ড্রাইভ করে কাকলি স্কুলে যান। স্কুলের পাশে গাড়ি পার্কিং করে ডাঃ সালাহ উদ্দিন পুত্র আবিরকে নিয়ে স্কুলের ভিতরে যান। যাবার সময় তিনি গাড়ির চাবি নিয়ে যান। চাঁদনী ও মিনহাজ গাড়িতে অপেক্ষমান থাকেন। ডাঃ শরীফ তার পুত্র আবিরকে কাকলি স্কুলের ভিতরে কাজলের ক্যান্টিন থেকে কিছু খাবার কিনে দিচ্ছিলেন। গাড়িতে অপেক্ষমান চাঁদনী তার ভাই মিনহাজকে তার বাবার নিকট থেকে গাড়ির চাবি এনে তাকে কলেজে পৌঁছে দিতে বলে। তখন স্কুলের গেইটের বড় অংশ বন্ধ থাকায় পকেট গেইট দিয়ে শিক্ষার্থীরা সিরিয়ালে স্কুলে প্রবেশ করছিল। এডিসি জেনারেল শেখ মুর্শিদুল ইসলাম ও ইউএনও নুরুজ্জামান জেলা প্রশাসন পরিচালিত ওই স্কুলের পরীক্ষা তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন। এর আগে জেলা প্রশাসক হোমায়রা বেগম তাঁদেরকে বার্ষিক পরীক্ষা তদারকি দায়িত্ব দিয়ে অফিস আদেশ জারী করেন। পরীক্ষায় দায়িত্ব পালনের জন্য এডিসি পকেট গেইট দিয়ে স্কুলে প্রবেশের জন্য সিরিয়ালে অপেক্ষমান ছিলেন। এ সময় ডাঃ শরীফের পুত্র মিনহাজ চাবি আনার জন্য বাচ্ছাদেরকে ধাক্কা দিয়ে সিরিয়াল ক্রস করে পকেট গেইট দিয়ে স্কুলের ভিতরে প্রবেশ করতে যাচ্ছিল। তখন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা এডিসি মুর্শিদ আগে শিক্ষার্থীদেরকে স্কুলের ভিতরে প্রবেশ করতে দেবার জন্য মিনহাজকে অনুরোধ করেন। মিনহাজ এতে উত্তেজিত হয়ে এডিসির সাথে তর্কে জড়িয়ে তাকে গালমন্দ শুরু করে। ঘটনাস্থলের প্রত্যক্ষদর্শীরা তিনি এডিসি বলে তাকে জানালেও সে ক্ষান্ত হয়নি, সে এডিসিকে গালমন্দ ও হুমকি ধামকি দিয়ে স্কুলের ভিতরের দিকে চলে যায়। ডাঃ শরীফ তখন আবিরকে নিয়ে কাজলের ক্যান্টিনের পাশে ছিলেন। মিনহাজ সেখানে গিয়ে তার বাবাকে বলে, আমি স্কুলের ভিতরে প্রবেশের সময় এডিসি আমাকে বাধা দিয়েছে। এ সময় শেখ মুর্শিদুল ইসলামও পকেট গেইট দিয়ে স্কুলের মূল ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। মিনাজ তার বাবার পাশে দাঁড়িয়ে তখনও এডিসিকে চেঁছিয়ে গালমন্দ করছিল। তখন সালাহ উদ্দিন শরীফ এডিসির দিকে এগিয়ে আসেন এবং তার পুত্রকে স্কুলের ভিতরে প্রবেশ করতে বাধা দেয়া হয়েছে কেন তা জানতে চান। তখন এডিসি জানান, সে শিশুদেরকে ধাক্কা দিয়ে প্রবেশ করছিল, তাই আমি আগে শিক্ষার্থীদেরকে প্রবেশ করার সুযোগ দেবার জন্য তাকে অনুরোধ করেছি। এতে কি আমার দোষ হয়েছে? তখন ডাক্তার এডিসিকে বলেন “ডু ইউ নো হু আই এম”। মাস্তানি কর না? লক্ষ্মীপুরে কি তোমার বাবার জমিদারী? তখন এডিসি বলেন, “ডু ইউ নো হু আই এম”। আপনি কাকে কি বলছেন? এ কথা বলার সাথে সাথে ডাক্তার শরীফ এডিসির মুখে চড় দেন। এডিসি ডাক্তারের শার্টের কলার চেপে ধরেন। এ সময় মিনহাজ এডিসিকে কিল, ঘুষি দিয়ে তার শার্টের কলার চেপে ধরেন।

সেখানে উপস্থিত ইকবাল হোসাইন সোহাগ নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী তার ফেজবুক স্ট্যাটাসে ঘটনাটি তুলে ধরেছেন। তাতেও এ ঘটনা প্রসঙ্গে অনেক কিছু স্পষ্ট হয়েছে।

এডিসি শেখ মুর্শিদুল ইসলাম একজন সজ্জন মানুষ। লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসনে তিনি একজন জনপ্রিয় কর্মকর্তা। তিনি যে কোন মানুষের সাথে স্বাচ্ছন্দে কথা বলেন। নিরহংকারী এ মানুষটির মধ্যে কখনো কোন ভাব-লেশ পরিলক্ষিত হয়নি। অত্যন্ত সহজ-সরল, সদা হাস্যোজ্জল এ মানুষটির দৃষ্টিতে কোন অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হলে তিনি সাথে সাথে উপদেশ দিতেন। যেমনটি উপদেশ দিয়েছিলেন ডাঃ সালেহ উদ্দিন শরীফের পুত্র মিনহাজকে। তাঁর আশংঙ্কা ছিল ছেলেটি শিশুদেরকে ধাক্কা দিয়ে পকেট গেইট দিয়ে প্রবেশের জন্য যেভাবে আসছিল তাতে লোহার গেইটের সাথে ধাক্কা লেগে যদি কোন শিশু ব্যথা পায়! সদুপদেশ দিতে গিয়ে তিনি দফায় দফায় লাঞ্ছিত হয়েছেন।

একজন এডিসি হয়েও তিনি বিনা দোষে মার খেয়েছেন, ওএসডিও হয়েছেন, হাইকোর্টে সরাসরি হাজির হবার আদেশ পেয়েছেন। তার জন্য আর কি কি ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে তা আল্লাহ মালুম।

দন্ডপ্রাপ্ত ডাঃ সালাহ উদ্দিন সোমবার তিন মাসের সাজা পেলেও মঙ্গলবার আপিলের শর্তে জামিন আর বুধবার মামলা থেকে খালাস পেয়ে ডিসি অফিসের সামনে ‘ভি’ চিহ্ন দেখিয়েছেন। পিতা পুত্র মিলিয়ে এডিসিকে পিটিয়ে ড্যাব নেতা ডাঃ সালাহ উদ্দিন শরীফ এখন লক্ষ্মীপুর শহরের বড় মাপের হিরো! এদেশের প্রেক্ষাপটে যিনি যেভাবেই জয়ী হউন না কেন; মিডিয়া, রাজনীতি, জনগণ সব সময় জয়ীর পক্ষেই থাকে, পরাজিতের পক্ষে কেউ থাকেনা। এখানে এটাই দেখা গেছে।

প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বিনা অপরাধে এত বড় লাঞ্ছনা পেতে চোখে দেখা দূরে থাকুক; গল্পেও দেখেনি। যতদূর জানা যায় এ ধরণের ঘটনা শুধু বাংলাদেশে নয় ভারতবর্ষেও এটিই প্রথম বলে জানান অনেকে।

বিনা দোষে একজন সরকারি কর্মকর্তা দফায় দফায় শাস্তি পেতে পারেন শেখ মুর্শিদুল ইসলাম তার একটি দৃষ্টান্ত। বিগত কয়েকদিন যাবত একজন ভালো মানুষের প্রতি নিয়তির নির্মম নিষ্ঠুর আচরণ ! শেষ পর্যন্ত নিজের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও হুজুগে কান দিয়ে তার পাশে দাঁড়ায়নি, বিনাদোষে তাঁকে ওএসডি করা হয়েছে। স্রষ্টা যেন শেখ মুর্শিদুল ইসলামকে এসব অন্যায় সয়ে নেবার ক্ষমতা দান করেন- এমনটাই প্রত্যাশা লক্ষ্মীপুরবাসীর।

Spread the love

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ



Design & Developed by Md Abdur Rashid, Mobile: 01720541362, Email:arashid882003@gmail.com