১২:০৫ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রু ০৯, ২০১৯
নিজস্ব প্রতিনিধি:
লক্ষ্মীপুরের রামগতি এবং কমলনগরকে মেঘনা নদীর ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য যে প্রকল্প চলছে তার প্রথম স্বপ্নদ্রষ্টা অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান। এবার স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও সাধারণ মানুষের অনুরোধে কমলনগর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে দলীয় সমর্থনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি ) বিকেলে আওয়ামীলীগ সভাপতির ধানমন্ডি কার্যালয়ে তাঁর বড় ছেলে আবদুর রহমান তাঁর পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান পেশায় আয়কর আইনজীবি ও লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি। তাঁর স্বপ্ন ও ধ্যানজ্ঞান ছিল মেঘনার ভাঙ্গন ঠেকানো নিয়ে। একান্ত সাক্ষাতকারে বিভিন্ন তথ্য দেখে জানা যায় মেঘনার ভাঙ্গনরোধের তাঁর স্বপ্নের কথা।
এসময় সাক্ষাতে আরও জানান, তিনি ২০০৮ সালে লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ক্রয় করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাতের সময় তিনি নিজের নমিমেশনের বিনিময়ে রামগতি-কমলনগরের নদী ভাঙ্গনরোধ চেয়ে নমিনেশন প্রত্যাহার করে নেন। নির্বাচনে আওয়ামলীগ জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। কিন্তু তাঁর আসনে আওয়ামীলীগ জয়লাভ করেননি। পরে তিনি রামগতি- কমলনগরকে মেঘনার ভাঙ্গন থেকে রক্ষার জন্য সরাসরি প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেন।
তাঁর আবেদনের প্রেক্ষিতে (ইউও-১৩.৩৯.১৬.০০.০০.১০.২০০৯) ২০০৯ সালের ২৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেঘনার ভাঙ্গন থেকে রামগতি-কমলনগর রক্ষাকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়কে নির্দেশ দেন। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ১৮ জুলাই ( স্মারক-৪-পি-২৫/চীফ প্ল্যানিং/১৫৩৬) পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় ডিপিপি প্রনয়নের প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহন করে। এরপর ২০১১ সালের ১৬ আগষ্ট তিনি পূনরায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আবেদন করেন। পরে ২০১২ সালের ১৫ জানুয়ারি তারিখে এটি কে প্রকল্পটিভুক্ত করার জন্য বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় কে চুড়ান্ত অনুরোধ করে (পরি/১০১)। এর মধ্যে সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।
অ্যাডঃ মাহবুবুর রহমান শুধু নদী ভাঙ্গনরোধ করতেই ২০১৪ সালেও তিনি আবার আওয়ামীলীগের মনোনয়ন ক্রয় করেন। কিন্তু এ বছরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার এলাকার নদী ভাঙ্গনরোধে কাজ হবে এমন নিশ্চিত আশ্বাস দিলে তিনি আর নির্বাচনে অংশ নেয়নি। নির্বাচনে তার আসনে আওয়ামীলীগ জয়লাভ করে। ফলে তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের চিন্তাটি গতি পায়।
শেষ পর্যন্ত ২০১৪ সালের ৫ আগষ্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা রামগতি ও কমলনগর উপজেলা এবং তৎসংলগ্ন এলাকাকে মেঘনা নদীর অব্যাহত ভাঙ্গন হতে রক্ষাকল্পে নদীর তীর সংরক্ষণ (১ম পর্যায়)’ শীর্ষক ১শ ৯৮ কোটি ২ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্প পাশ করে । যার শেষ সময় সীমা ২০১৯ সাল। ২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি রামগতি উপজেলা কমপ্লেক্সের সামনে নদী ভাঙারোধ প্রকল্পের কাজের উদ্ধোধন করেন বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুন।
কিন্তু প্রকল্পটির প্রথম পর্যায়ে রামগতির আলেকজান্ডার এলাকার বাঁধটি উপযুক্ত হলেও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে কমলনগরের বাঁধ নিয়ে প্রকাশিত সংবাদে দেখে তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করেন। ইতোমধ্যে তার নিজের এলাকা এখনো অরক্ষিত। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এ সরকারের মেয়াদেই তার মতো লাখো মানুষের স্বপ্নটি বাস্তবায়িত হবে।
অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমানের জন্ম ১৯৪৪ সালের ১৬ আগষ্ট লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলার কুশাখালী গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তবে মেঘনা নদীল ভাঙ্গনের শিকার হয়ে ১৯৫১ সালে তাদের পুরো পরিবার সাবেক রামগতি (বর্তমানে কমলনগর) উপজেলার চর মার্টিন গ্রামে এসে নতুন বসতি স্থাপন করে । বাবা হাজী মৌলভী হেদায়েত উল্লাহ এবং মাতা নুরজাহান বেগম। তিনি ১৯৬৩ সালে লক্ষ্মীপুরের দালাল বাজার এনকে হাই স্কুল থেকে মেট্রিককুলেশন পাশ করেন। এরপর ১৯৬৫ সালে এইচএসসি এবং ১৯৬৮ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী নেন। ১৯৬৩ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়ার সময়ই তাঁর রাজনীতিতে হাতে খড়ি হয়। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয়হন। স্নাতক পাশের পরে তিনি রায়পুরের রাখালিয়া হাই স্কুলে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। এ বিদ্যালয়ে তিনি ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত চাকুরী করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি ঢাকায় গিয়ে রেভিনিউ বোর্ডের সনদ নিয়ে আয়কর আইনজীবি হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে অদ্যাবধি সে পেশায় নিয়োজিত আছেন।