• ঢাকা,বাংলাদেশ
  • শুক্রবার | ২৪শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ | বসন্তকাল | ভোর ৫:৪৭
  • আর্কাইভ

দলীয়দের বিরূপ প্রতিক্রিয়াবাণে বিদ্ধ লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদ উপনির্বাচনে আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা !

৮:০২ অপরাহ্ণ, আগ ২২, ২০১৭

মীর ফরহাদ হোসেন সুমন :

“দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল নেতা হয়েও দলীয় হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন যাঁরা, তাঁরা মূলতঃ দলীয় আদর্শের অনুসারী হতে পারেননা। এ পর্যায়ে দলে এমন নেতাদের নেতৃত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে। ”

আগামী ১০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বীতা প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের বিভিন্ন স্তরের একাধিক নেতা-কর্মী-সমর্থকরা উপরোক্ত মন্তব্য করেন। এ প্রসঙ্গে তাঁরা আরও মন্তব্য করে বলেন, “ স্বয়ং দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকে অমান্য করে বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচনে প্রার্থীতা এনে তাঁরা সভানেত্রীকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়েছেন বলে প্রতিয়মান হয়। জেলার শীর্ষ পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতা হয়েও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে তাঁরা দলের হাইকমান্ডের প্রতি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছেন বলেও মনে হয়।”

মন্তব্যকারী কয়েকজন জানান, “ বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও দেখা গেছে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যাঁরা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন,তাঁদেরকে দলের উর্ধ্বতন কমিটির পক্ষ থেকে বহিষ্কারাদেশ দেওয়া হয়েছে। অবশ্য পরবর্তিতে তারা ফের দলে ভীড়তেও দেখা গেছে। এমনকি জেলা পরিষদের বিগত নির্বাচনেও দলীয় মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনী তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়েছে। বর্তমানে যাঁরা বিদ্রোহী প্রার্থী তাঁরাই সেদিন দলের সিদ্ধান্তকে সম্মান দেখানোর কথা বলে দলীয় প্রার্থীকে জেতানোর প্রচেষ্টায় সবাইকে আহবান জানিয়েছেন। অথচ আজ তাঁরাই দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নিজেদের প্রার্থীতা এনেছেন। এতে করে তাঁরা নিজেদের দ্বৈত নীতির প্রকাশ করেছেন।”

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষকলীগের সভাপতি ও জেলা চেয়ারম্যান সমিতির অন্যতম নেতা ওমর হোছাইন ভুলু দলীয় মনোনয়নের সপক্ষে সম্মান জ্ঞাপন করে মুঠোফোনে বলেন, ‍” আগামী ২৫ আগস্ট মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। চুড়ান্তভাবে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী থাকবেন কারা তা দেখার জন্য শেষদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।” বিদ্রোহী প্রার্থী প্রসঙ্গে তিনি আপাততঃ কোন প্রকার মন্তব্য প্রদান করতে অস্বীকৃতি জানান।

এদিকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন এর পক্ষে অধিকাংশ ভোটারদের আগাম সমর্থন প্রদানের খবর প্রকাশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেননা বলে পাল্টা প্রাশ্ন ছুঁড়ে জানান এমন তথ্য কোথায় প্রকাশ হয়েছে।

একই বিষয়ে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বিজন বিহারী ঘোষ মুঠোফেনে বলেন,“ একজন রাজনৈতিক হিসেবে দলের সিদ্ধান্তকে মান্য করা অবশ্যই কর্তব্য। তবে জেলা পরিষদ নির্বাচনের বিষয়টি ভিন্ন ব্যাপার। এ নির্বাচনে অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ ও ভোটার এডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নকে সমর্থন প্রদান করেছেন।”

প্রসঙ্গক্রমে একইসাথে তিনি স্বীকারোক্তি প্রদানসহ আরও বলেন,“ বিগত ইউপি নির্বাচনে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থীকে আমরা বহিষ্কারাদেশ দিয়েছি। যেহেতু জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীরা জেলা পর্যায়ের নেতা সেহেতু এব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার আমাদের নেই। যা কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয় তা কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড নিবে। ”

উক্ত নির্বাচনে আওয়ামীলীগ দলীয় মনোনীত প্রার্থী ও জেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি আলহাজ¦ মো.শাহজাহান বলেন,“ দলের দয়িত্বশীল নেতা হিসেবে দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তকে উপক্ষো বা অমান্য করা কোনভাবেই উচিত নয়। বিগত নির্বাচনেও শেষ পর্যন্ত আমরা দলীয় সিদ্ধান্তকেই মেনে নিয়েছি। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমাদানকারী সকলের বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে আমার কাছে তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। আমি তা জানিয়েছি। যেকোন সময় দলের পক্ষ থেকে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত প্রকাশ হতে পারে বলে জানান তিনি।এসময় বিদ্রোহী প্রার্থী ও জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের পক্ষে অধিকাংশ ভোটারদের আগাম সমর্থন প্রদানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,“ এ ব্যাপারে আমি অনেক ভোটারের সাথে আলাপ করেছি। তারা জানিয়েছে দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমাদেরকে কথা শোনার জন্য আহবান করেছেন। নেতা হিসেবে তাঁকে সম্মান দেখিয়েই তারা কথা শুনতে গিয়েছে মর্মে জানিয়েছে। তবে তাঁকে সমর্থন প্রদানের জন্য যায়নি তারা।”

ভিন্ন কথায় ডেকে এনে নির্বাচনে নিজের পক্ষে সমর্থন আদায়ের প্রসঙ্গে কথা উত্থাপন করে মূলতঃ তিনি ভোটারদের সাথে প্রতারনার আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানান মো.শাহাজাহান।

জানার জন্য লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা হিসেবে কেন্দ্রীয়
আওয়ামীলীগের সম্পাদকীয় উপ-কমিটির সহ সম্পাদক মো.মমিন পাটওয়ারীর ব্যাক্তিগত নাম্বারের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাঁর সাথে যোগাযোগ
করা সম্ভব হয়নি।

লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে ইতিপূর্বে দলীয় মনোনয়ন এর পক্ষে সম্মানসহ সমর্থন প্রদর্শন করে লক্ষ্মীপুর জেলা যুবলীগের আহবায়ক ও সদর
উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ্ উদ্দিন টিপু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাক্তিগত মন্তব্য সংশ্লিষ্ট একটি পোস্ট দিয়ে ব্যাপক আলোচনা
সৃষ্টি করেন।

এদিকে উক্ত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন মনোনয়নপত্র দাখিল পরবর্তি সময়ে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে নির্বাচনী প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করে এক বক্তব্যে সাহস,বুদ্ধি আর বিশ্বাস এই তিন এর
সমন্বয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন বলে ঘোষনা দিয়েছেন।
একইসময় তিনি ঘোষনা দিয়েছেন শত বাধা পেরিয়ে ভোটে জিতে তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পায়ে সালাম দিয়ে তবেই ঘরে ফিরবেন।
তিনি জানান , জেলার সকল উপজেলা,পৌরসভা, ইউনিয়ন,ওয়ার্ড সহ সবগুলো ইউনিটের আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনাক্রমে সিদ্ধান্ত পেয়েই তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা নেমেছেন।
এছাড়াও জেলার ৫৫টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান,মেম্বার, সবগুলো পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর সহ সর্বমোট ৮২৩ ভোটারের মধ্যে ৭৪৬ জন ভোটার তাঁকে আগাম সমর্থন প্রদান করেছেন বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য , চেয়ারম্যান পদে লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের উপ-নির্বাচনে রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব
মোঃ শাহাজাহানকে দলীয় মনোনয়ন প্রদান করেছেন আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত বৃহস্পতিবার রাতে দলটির কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ড.আবদুস সোবাহান গোলাপ স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মোঃ শাহাজাহানের মনোনয়ন নিশ্চিত করা হয়।


এছাড়া আসন্ন লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের উপ-নির্বাচনে রোববার (২০ আগস্ট) মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে চার প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী মো. শাহজাহান ছাড়াও একই দলের আরও তিনজন রয়েছেন। তারা হলেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক
এ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন, জেলা আওয়ামীলীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক মো. আব্দুল মতলব ও পৌর মেয়র আবু তাহেরের সহধর্মিনী নাজমা সুলতানা চৌধুরী।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান জানান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামছুল ইসলাম মারা যাওয়ায়
শূন্য পদে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন পর্যন্ত চার প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা হয়েছে। ২১ আগস্ট যাচাই বাছাই ও ২৫ আগস্ট প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। উক্ত নির্বাচনে ১৫টি কেন্দ্রে ৮২৩ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন বলে জানান তিনি।

Spread the love

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ



Design & Developed by Md Abdur Rashid, Mobile: 01720541362, Email:arashid882003@gmail.com