• ঢাকা,বাংলাদেশ
  • বুধবার | ৭ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | গ্রীষ্মকাল | সন্ধ্যা ৬:১৮
  • আর্কাইভ

আত্রাইয়ে কুমড়া বড়ি তৈরিতেব্যস্ত কারিগররা

১২:০৪ অপরাহ্ণ, নভে ১৩, ২০১৭

তানজিম আহম্মেদ সুমন,নওগাঁ :-

নওগাঁর আত্রাইয়ে চলছে এখন মাস কালাই ডালের সুস্বাদু কুমড়া বড়ি তৈরির ধুম।প্রায় সারা বছর কুমড়া বড়ি তৈরির আমেজ থাকলেও হেমন্ত-শীতকালে এ উপজেলার বেশ কিছু গ্রামের নারী-পুরুষ কিশোর- কিশোরীরা কুমড়া বড়ি তৈরিতে তাদের সংসারে বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করে। দামে কম ,মানে ভালো হওয়ায়  স্থানীয় চাহিদা  মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে এ কুমড়া বড়ি। বিশেষ করে রংপুর , সৈয়দপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, জয়পুরহাট,গাইবান্ধা,নাটোর,সিরাজগঞ্জের পাইকাররা এসে আত্রাই থেকে কুমড়া বড়ি কিনে নিয়ে যাচ্ছে।

এবছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ও ব্যবসা ভাল হওয়ায় কুমড়া বড়ি তৈরির সাথে জড়িতরা বেশ খুশ মেজাজে রয়েছে।  কার্তিক মাসে ঘন কুয়াশায় শীতের আগমন টের পেয়ে ও শ্রমজীবিদের অন্যান্য কাজ কম থাকার কারনে নারী-পুরুষ মিলে ভোর থেকে সকাল ৮/৯ টা পর্যন্ত  কুমড়া বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ হওয়ায়  কুমড়া বড়ির ব্যবসা প্রান্তিক পর্যায়ে গ্রামীণ অর্থনীতিতে নীরবে রেখে যাচ্ছে বিশাল অবদান। সরকারী উপযুক্ত পৃষ্ঠ পোষকতা পেলে স্বল্প আয়ের গ্রামের মানুষগুলো ব্যবসা আরো প্রসার ঘাঁটিয়ে অর্থনৈতি ভাবে স্বাবলম্বী হতে পারবে।

জানা গেছে, উপজেলার সাহেবঞ্জ পালপাড়া, মির্জপুর, বিশা,তেজনন্দি, বান্দাইখাড়া, তিলাবাদুরীসহ বিভিন্ন গ্রামের স্বল্প আয়ের প্রায় শতাধীক পরিবার দীর্ঘ দিন ধরে জীবন-জীবিকার প্রধান কর্ম হিসেবে প্রায় সারা বছরই তারা কুমড়া বড়ি তৈরি ও ব্যবসা পুরো মৌসুম হওয়ায় বাড়ি বাড়ি চলছে এমন সু-স্বাদু খাবার কুমড়া বড়ি তৈরির ব্যস্ত সময়। আত্রাই উপজেলা তথা নওগাঁ জেলা এবং আশ পাশের বিভিন্ন উপজেলার হাট বাজারে ব্যাপক হারে পাওয়া যায এই সু-স্বাদু খাবার কুমড়া বড়ি।কুমড়া বড়ি তৈরির মূল উপকরণ হলো মাসকালাই ও খেসারির ডাল। মাসকালাই প্রথমে রোদে শুকিয়ে যাতাকলে ভেঙ্গে পরিস্কার করে তিন থেকে চার ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। এর পর ভোর রাত থেকে পরিবারের ছোট-বড় সবাই মিলে শিল পাটায় ডাল পিশে গুড়ো করার পর তা দিয়ে কুমড়া বড়ি তৈরি করা হয়। কুমড়া বড়ি তৈরির পর থেকে একটানা ভালো রোদ হলে দুই দিনের মধ্যেই শুকিযে খাবার উপযোগী হলে হাট বাজারে খুচরা ও পাইকারী বিক্রয় করা হয়। নানান জাতের তরকারির সাথে কুমড়া বড়ি রান্না করলে খাবারে  এনে দেয় ভিন্ন রকমের স্বাদ।

প্রায় সব শ্রেনির মানুষ কুমড়া বড়ির তরকারিতে আকৃষ্ট। তবে এর নাম করণ নিয়ে রয়েছে এলাকা ভেদে  নানান কথা,কথিত আছে য়ে,এক সময় দেশের অভিজাত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা কুমড়া এবং ডালে মিশ্রণে এটি তৈরি করত বলে এর নাম কুমড়া বড়ি। এক কালের শখের খাবার থেকে উৎপত্তি হওয়া কুমড়া বড়ি  এখন শত শত  মানুষের কর্মসংস্থানও প্রান্তিক পর্যায়ে অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।  একজন নারী কিংম্বা পুরুষ প্রতিদিন তিন থেকে চার কেজি মাস কালাই ডালের কুমরা বড়ি তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে গ্রামের নারীরা সংসারের বাড়তি আয়ের জন্য কুমড়া বড়ি তৈরিতে বেশি সময় কাটান।

উপজেলার সাহেবগঞ্জ পালপাড়া শ্রী গৌর চন্দ হালদার (৪৫) ও  তার সহধর্মিনী লতা হালদার(৩৫)  এবং একই গ্রামের  শ্রী সুমতি রানী মহন্ত (৪৫) জানান, মাসকালাই থেকে তৈরি আসল কুমড়া বড়ি প্রতি কেজি ১৬০ থেকে ২০০টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। সারা বছর এ ব্যবসা চললেও শীতকালে বড়ির চাহিদা বৃদ্ধির কারণে বেশি পরিমাণ বড়ি তৈরি করি।আমাদের সাহেবগঞ্জ পালপাড়া থেকে  বিভিন্ন মানের প্রায় ১৫ থেকে ২০ মন কুমড়া বড়ি তৈরি হয়।অল্প পুঁজির কারণে কুমড়া বড়ি তৈরির উপকরণ গুলো আমরা মজুত করতে না পারায় দিনে আনা দিনে বিক্রয় করার কারনে লাভ খুব বেশি হয়না। তার পরও পারিবারিক ভাবে আমাদের পাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষরা মাঠে ঘাটে কাজ করার চেয়ে কুমড়া বড়ির ব্যবসা করতেই বেশি পছন্দ করে।আবহাওয়া ভালো থাকলে কুমড়া বড়ি তৈরিতে আমাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায় এবং ব্যবসাও ভালো হয়।

আত্রাই উপজেলা পরিষদের  ভাইস চেয়ারম্যান শেখ একরামূল বারী রঞ্জু বলেন,সদর পাঁচুপুর ইউপি সাহেবগঞ্জ পালপাড়া সহ উপজেলার বেশ কিছু গ্রামে মৌসুমি তরকারী  হিসেবে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা কুমড়া বড়ি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে। তবে এদেরকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণও সরকারী পর্যায় থেকে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দেয়া হলে তারা আরো নিজেদের উন্নয় ঘঁটাতে পারবে।

Spread the love

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ



Design & Developed by Md Abdur Rashid, Mobile: 01720541362, Email:arashid882003@gmail.com