১:৩৪ পূর্বাহ্ণ, মে ২৬, ২০১৯
মোঃ নিজাম উদ্দিন : লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়নের মধ্য চররমনী মোহন ও পূর্ব চররমনী মোহন গ্রামের প্রায় ৪ শতাধিক বিদ্যুৎ প্রত্যাশী পরিবার জিম্মি হয়ে আছে দালাল এবং ঠিকাদারের কাছে। পল্লী বিদ্যুতের লাইন নির্মাণে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও দালাল আশানুরুপ অর্থ না পেয়ে মাঝপথে ওই এলাকার একটি বৈদ্যুতিক লাইনের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। গেল এক বছর আগে ঠিকাদার কর্তৃক কয়েকটি খুঁটি স্থাপন করলেও তাতে বৈদ্যুতিক তার এবং ট্রান্সফরমারের কাজ সম্পন্ন করেনি। স্থানীয় দালাল দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেলু এবং ঠিকাদার সবুজের অনৈতিক আবদার পূরণ না করায় অন্ধকারছন্ন এ দুটি গ্রাম। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
তবে মালামাল স্বল্পতা এবং জনবল সঙ্কটের কারণে লাইন নির্মাণ কাজ বিলম্ব হচ্ছে বলে জানান ঠিকাদার মো. সবুজ।
জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুতের আওতায় ১৭০৭ নং লটে ১২ কি.মি. লাইন নির্মাণের কাজ পান মেসার্স জেনিথ ইঞ্জিনিয়ার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। উক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি সবুজ নামের একজন সাব্ ঠিকাদারকে প্রদান করেন। গেল এক বছর আগে ঠিকাদার সবুজ কাজটি শুরু করলেও মাঝপথে কাজটি স্থগিত রাখে।
৯ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মো. দুলাল হোসেন বলেন, লাইন নির্মাণের কাজটি স্থানীয় দালাল দেলোয়ার হোসেনের তত্ত্বাবধানে ছিলো। পরে বিভিন্ন অজুহাতে সে কাজটি বন্ধ করে দেয়। তিনি জানান, দালাল এবং ঠিকাদারের অনৈতিক আবদার পূরণ করতে না পারায় প্রায় ৪ শতাধিক গ্রাহক বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আশপাশের বিভিন্ন এলাকা বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হলেও মধ্য চররমনী মোহন ও পূর্ব চররমনী মোহন এখনো অন্ধকার হয়ে আছে।
স্থানীয়রা বলেন, বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে দিতে উদ্যোগে নিয়েছে। সেই লক্ষ্যে বৈদুত্যিক লাইন নির্মাণ করে প্রত্যন্ত গ্রামগুলোকে বিদ্যুতের আওতায় আনতে বিভিন্ন প্রদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। বর্তমানে কয়েক মিনিটের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়। কিন্তু দালাল এবং অসাধু ঠিকাদারের কারণে গেল এক বছরেও দুই গ্রামের মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসতে পরেনি। ফলে ভেস্তে যেতে বসেছে “বর্তমান সরকারের উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ কার্যক্রম।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়নের মজুচৌধুরীর হাটের অদূরে দক্ষিণে বেঁড়ি এবং এর আশেপাশে কয়েকটি খুঁটি স্থাপন করা হলেও তাতে তার টানা হয়নি। এছাড়া এলাকার বিভিন্নস্থানে বেশ কয়েকটি খুঁটি ফেলে রাখা হয়েছে। দীর্ঘ সময় পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখার ফলে কয়েকটি খুঁটি বিনষ্ট হয়ে গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারের খামখেয়ালীপনার কারণে নষ্ট হচ্ছে সরকারী সম্পদ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১২ কি.মি. লাইনটিকে কেন্দ্র করে স্থানীয়ভাবে বাণিজ্য শুরু করে দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেলু নামে স্থানীয় এক দালাল ও তার সহযোগী মাসুদ। দালাল দেলু এলাকার বিভিন্নস্থানে বিদ্যুৎ প্রত্যাশী গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতে এলাকাভিত্তিক প্রতিনিধি নিয়োগ করে। তাদের মাধ্যমে গ্রাহক প্রতি সর্বনি¤œ ৫শ’ থেকে শুরু করে আড়াই হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেয়। এ টাকার একটি অংশ ঠিকাদারকেও প্রদান করা হয়। ঠিকাদার কর্তৃক এলাকায় কয়েকটি খুঁটি স্থাপন করে মাঝপথে কাজটি বন্ধ করে দেয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দালাল দেলোয়ার ও ঠিকাদার সবুজ স্থানীয়দের কাছ থেকে আশানুরুপ অর্থ না পেয়ে লাইনটির নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখে।
মধ্য চররমনী মোহন গ্রামের দালাল দেলোয়ারের প্রতিনিধি জাকির হোসেন নামে স্থানী এক চা দোকানদার। কালের প্রবাহের সাথে কথা হয় জাকির হোসেনের। তিনি জানান, বিদ্যুৎ লাইনের আশায় এলাকার লোকজন তার কাছে বিভিন্ন অংকের টাকা জমা দেয়। প্রায় ২৫ হাজার টাকা গেল এক বছর আগে দালাল দেলোয়ারের হাতে তুলে দেয় জাকির। পরে ঠিকাদারের লোকজন এলাকায় কয়েকটি খুঁটি স্থাপন করে কিন্ত তাতে বৈদ্যুতিক তার না টেনে অসম্পন্ন ফেলে রাখে। কাজ সম্পন্ন করার বিষয়ে তাকে অনুরোধ করলে তিনি বিভিন্ন অজুহাত দেখান। স্থানীয় আরও কয়েকজন লোক জানান, দেলোয়ার ইলেট্রিক কাজ করার সুবাধে সে পল্লী বিদ্যুতের লাইন এবং মিটারের দালালি করে। বিদ্যুৎ প্রত্যাশীরা তাকে চাহিদামতো টাকা না দিলে নানা হয়রানি করে সে।
এ ব্যাপারে দালাল দেলায়ার হোসেন বলেন, স্থানীয়ভাবে তার সাথে একটি ঝামেলা হওয়ায় তিনি এ কাজ থেকে সরে এসেছেন। টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
ঠিকাদার মো. সবুজ বলেন, পর্যাপ্ত মালামালের অভাবে তিনি কাজটি সম্পন্ন করতে পারেন নি। এ ছাড়া তার জনবল সঙ্কট ছিলো বলে জানান তিনি। টাকা ছাড়া কাজ না করার বিষয়ে তিনি বলেন, এলাকার কিছু লোক আমার নামে টাকা উঠালেও আমাকে কোন টাকা দেয়নি।
১১:৩৮ পূর্বাহ্ণ, মে ১৩, ২০২৩
১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ, মে ১২, ২০২৩