২:০৬ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রু ০৫, ২০২১
মো. নিজাম উদ্দিন : লক্ষ্মীপুরের রায়পুর পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন রুবেল ভাট তাঁর প্রতিদ্বন্ধী স্বতন্ত্র প্রার্থীকে রাজাকার বলে আখ্যায়িত করেছেন। যদিও এ বিষয়ে তিনি কোন তথ্য প্রমান বা সূত্র উপস্থাপন করেননি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রায়পুর প্রেসক্লাবে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় ২২ তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিতে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যাপক মনির আহম্মদকে লক্ষ্য করে এ মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় দুইজন পাশাপাশি আসনে বসে ছিলেন। আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রায়পুর থানার ওসি আব্দুল জলিল। অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন রায়পুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মারুফ বিন জাকারিয়া, প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবুল আলম মিন্টুসহ উপজেলায় কর্মরত প্রায় অর্ধশত গণমাধ্যমকর্মী।
অনুষ্ঠানে এসে রুবেল ভাট সন্মানিত হয়েছেন- আবার কলঙ্কিতও হয়েছেন বলে একেকবার একেক ধরণের মন্তব্য করেছেন। তাঁর এমন মন্ত্যবকে বেফাঁস বলে মনে করছেন উপস্থিত লোকজনসহ অনেকে। এ নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীসহ পৌরবাসীর মধ্যে আলোচনা ও সমালোচনা চলছে বলে জানা গেছে। যদিও উপজেলা নির্বাচন অফিসে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর সাথে কুশল বিনিময় এবং কোলাকুলি করেছেন রুবেল ভাট। আর এতে এখন অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন- আওয়ামীলীগের প্রার্থী হয়ে কিভাবে সেই রাজাকারের সাথে কোলাকুলি করেছেন তিনি?
স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর সাথে কুশল বিনিময় করছেন আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী রুবেল ভাট, যাকে তিনি রাজাকার বলে আখ্যায়িত করেছেন
বক্তব্যের শুরুতে মেয়র প্রার্থী রুবেল ভাট বলেন, ‘নুরুল ইসলাম (যমুনা গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান) একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। আপনারা আমাকে এখানে দাওয়াত করেছেন- আমি খুব সন্মানিত। আপনারা বলেছেন এখানে একজন বিএনপির প্রার্থী এবিএম জিলানী সাহেব রয়েছেন, তাকেও আপনারা দাওয়াত করেছেন। কিন্তু ওনাকে আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এটা খুবি আপত্তিকর, কিন্তু খুবই ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলতে হচ্ছে- একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার স্মরণে আজকের এ অনুষ্ঠান, সেই অনুষ্ঠানে একজন রাজাকার (!) আমার পাশে বসে আছে। যারা ৫ই জানুয়ারী নির্বাচনে সারাদেশের ন্যায় রায়পুরের প্রতিটি জায়গায় রাস্তা-ঘাট, গাছ কেটে যে অশান্তি সৃষ্টি করেছে- তারা আজকে আমার পাশে বসা। আজকে আমার প্রিয় ভাই মারুফ বিন জাকারিয়া (উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান) তাদের হাতেই লাঞ্চিত হয়েছে। মৃত ভেবে ফেলে রেখে গেছিলো। সে মানুষটার জন্য আপনারা আমাকে এনে ‘কলঙ্কিত’ করেছেন। আমি খুশি হয়েছি, এর পরও আমি বলবো- সামনে নির্বাচনে ওনারা কি প্রতিশ্রুতি দিবে? প্রতিশ্রুতি দেওয়ার কোন ভাষা তাদের থাকতে পারেনা। যারা রাস্তায় গাছ কাটে হরতাল দেয়, শিশু বাচ্ছাকে দগ্ধ করে- তারা কিসের প্রতিশ্রুতি দিবে? তারা কিসের উন্নয়ন দেখাবে রায়পুরে? আপনারা আমাকে এখানে এনেছেন- আমি সন্মানিত হয়েছি।’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন মেয়র প্রার্থী রুবেল ভাট
বক্তব্যের শেষে তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনাদের লেখনি শহীদের রক্তের চেয়েও বেশি দামি। আপনারা এমন কোন লেখা লেখবেন না, আপনাদের সুন্দর-সৎ লেখার মাধ্যমে যাতে মানুষের ক্ষতি না হয়। আপনারা সঠিক তথ্য নিয়ে আসবেন- যাতে আমরা সামনের দিকে কাজ করতে পারি। পৌরসভার বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। এ সমস্ত লেখা আপনাদের লেখনির মাধ্যমে নিয়ে আসবেন। আমি যদি অন্যায়ও করে থাকি আপনারা আমার অন্যায় লেখবেন। কোন পক্ষপাতিত্ব করবেন না। স্বজন প্রীতি করবেন না। আপনাদের লেখার মাধ্যমে সঠিক তথ্য নিয়ে আসবেন।
প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী রাজাকার- এমন অভিযোগ কতটুকু সত্য তা জানতে রুবেল ভাটের সাথে বৃহস্পতিবার রাতেই কালের প্রবাহের পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তাঁর মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল দেওয়ার পর শেষ পর্যন্ত তিনি রিসিভ করে মিটিং-এ ব্যস্ত ছিলেন বলে রেখে দেন।
তবে এ বিষয়ে স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী অধ্যাপক মনির আহম্মদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিডিয়াকে কোন মন্তব্য দেননি।
অন্যদিকে, রায়পুর পৌরসভায় আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পাওয়া এ প্রার্থী ‘অনেকটা উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো অবস্থা। বলতে গেলে উপজেলা এবং পৌরবাসীর কাছে কাছে নতুন মুখ তিনি। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও স্থানীয় রাজনীতিতে তেমন কোন ভূমিকা নেই তাঁর। বর্তমানে তিনি অ্যামেরিকা প্রবাসী। সেখানে থাকা অবস্থায় একটি মামলায় তার বিরুদ্ধে অর্থদন্ডের রায় হয়েছে বলেও গত কয়েদিন থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হচ্ছে। রায়ের একটি কপিও ফেসবুকে প্রকাশ করেছে অনেকে। যদিও বিষয়টির সতত্য এখনো যাচাই করেনি কালের প্রবাহ।
স্থানীয়দের মতে, পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হঠাৎ তিনি রায়পুরে এসে সভা-সমাবেশ করে পরিচিতি পাওয়ার চেষ্টা করেন।
সম্প্রতি দলীয় কাউন্সিলর ভোটে তিনি একটি ভোটও পাননি। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি দল থেকে মনোনয়ন নিতে সক্ষম হয়েছেন। স্থানীয় আওয়ামীলীগের অধিকাংশ নেতাকর্মীরাই বিষয়টি সহজে গ্রহণ না করায় গত সোমবার রায়পুরে এসেই বহিরাগতদের দ্বারা সংবর্ধিত হন তিনি।
উল্লেখ্য, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারী ৫ম ধাপে রায়পুর পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিসহ ৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
১১:৩৮ পূর্বাহ্ণ, মে ১৩, ২০২৩
১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ, মে ১২, ২০২৩