• ঢাকা,বাংলাদেশ
  • মঙ্গলবার | ২৮শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ | বসন্তকাল | বিকাল ৩:৩০
  • আর্কাইভ

ভালবেসে ভালবাসার ঘরে বেঁধে যে রাখে

২:২১ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রু ১৪, ২০১৮

১ম খন্ড: যে বয়সে প্রেম নিয়ে অন্য সবার মাতামাতি, সে বয়সে  প্রেম আমার কোন অনুভুতিতে প্রভাব ফেলেনি। ভাবতেই পারিনি সে প্রেম আমার জীবনেও দোলা দেবে। প্রেম নিয়ে  কোন অনুভুতি না থাকলেও, মনে মনে এটা ভেবেছি, যদি কখনও কাউকে ভাল লাগে, ফিল করি, কাউকে  ভালবাসি, তবে অবশ্যই সে ভাললাগা বা ভালবাসার কথা তাকে জানাব। আমার যেমন ভালবাসার কথা জানাবার অধিকার আছে তেমনি তারও তা গ্রহণ না  করার অধিকার আছে।

২০০৩ সাল ১৪ সেপ্টেম্বর । ইংরেজি পরীক্ষার জন্য গ্রুপ ওয়ার্ক করতে গিয়ে, সেদিন  তোর আমাকে সহজ সরল ভাবে বোঝানোর ক্ষমতা দেখে এতটাই মুগ্ধ হয়ে গেলাম,মাত্র ১ দিনের ভাবনায়, পরদিন অকপটে বলেই ফেললাম তোকে ভালবেসে ফেলেছি। সেমিনার কক্ষের পুরোটা জুড়েই ছিল আমাদের সবার  প্রাণচঞ্চল আড্ডা। কিন্তু সবার মাঝে থেকেও আমি আমার নিজেকে তোর মাঝে হারিয়ে ফেলেছি হাজারবার। সেদিন বুজলাম এটাই বোধ হয় ভালবাসা,প্রেম। খুব সাবলীলভাবে বলার পর ও বিশ্বাস করিস নি।

ভেবেছিলে এটা হয় নাকি। ক্লাসমেট এর সাথে প্রেম? আমিও তা ভেবেছিলাম। এই প্রেম কখনো সফল হবে না। কিন্তু  অবশেষে হার মানলাম দুজনে ভালবাসার কাছে।

শুরু হল আমাদের একটু একটু করে পথ চলা। মনে পড়ে কলেজের সেই উজ্জ্বল  সোনালি দিনগুলো? পুরো কলেজে যেন একটাই আদর্শ  জুটি। কলেজের সিনিয়র জুনিয়ররা সবাই খুব পছন্দ করতো আমাদের।আজ ও অনেকের মুখে আমাদের ভালবাসার গল্প । এমন কি আমাদের টিচারদের সহযোগিতাও কখনো ভুলে যাবার নয়। অনেকটাই বাংলা সিনেমার গল্পের মত।

আর এই গল্পটা সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। এক সাথে কলেজে আসা-যাওয়া, সারাদিন একসাথে ক্লাস করা, ক্লাস বিরতিতে ও এক সাথে আড্ডা, সেমিনার ওয়ার্ক, এমনকি একইসাথে কাকতালীয়ভাবে দুজনে পাশাপাশি বসে কলেজ জীবনের প্রায় সবগুলি  পরীক্ষা একসাথে শেষ করলাম। রেজাল্ট  ও আমাদের ডিপার্টমেন্ট এ আমরা সর্বোচ্চ মার্ক নিয়ে প্রথম ও দ্বিতীয়। সহপাঠীরা বলত, পরীক্ষার হলে বসে প্রেম করে ও তোরা এগিয়ে। বিধাতা যেন এভাবে সবসময় ফেভার করুক। সারাদিন একই সাথে থাকার পরও আবেগের বহিঃপ্রকাশ এর যেন  কমতি নেই। আর সেই  না বলা অনুভুতির প্রকাশ হতো চিঠিতে। আমাদের চিঠির সংখ্যা শুনে অনেকে আতকে উঠে। ২০০০ এর ও অধিক হবে।অবাক করা।তাও আবার যে সময় sms প্রক্রিয়া চালু হয়ে গেছে….

তুই থেকে তুমি তে আসতে  অনেক সময় লেগেছিল। কত কষ্ট ই না হল। আর চিঠিই যেন সহজ করে দিল অনেকটা।

২০০৬ সাল ১৬ ডিসেম্বর।  সম্পর্ক প্রায় ৩ বছরের  ও বেশি ।  প্রথম তোর হাত স্পর্শ করতে চেয়েছি, বলেছিলি, “থাক না আমি ত তোমারি আছি। ” বললাম আমি যে হাত বাড়িয়ে দিয়েছি”। সে প্রথম হাতে হাত রাখা।  সেই প্রথম স্পর্শ মনে হয় ৪ ঘণ্টার মত হাতে  হাত  ধরেছিলাম।আজ ও ধরে আছি একই ভাবে।

ঝগড়া, মান অভিমান, কষ্ট  ভালবাসার নৌকা চড়ে  আমরা পাড়ী দিয়েছি প্রায় সাড়ে ছয়  বছর প্রেমের সমুদ্র। বুলটি,  মুরাদ ভাই আজ  আপনাদের  কথা না বললেই নয়। ভালবাসা আর অভিমানের কত  স্বাক্ষী যে আপনারা।

প্রেমের শেষ পরিণয় মিলন। সেই মিলনের জন্য  আমাদেরকে পালিয়ে বিয়ে করতে হয় নি। দুই পরিবারের সমঝোতায় তার নেদারল্যান্ডস  আসার আগে আমাদের বিয়ের তারিখ ঠিক হয়। এটা খুব স্বাভাবিক ছিল! কিন্তু  এই সত্যি টা অনেকে জানে  না যে, আমরা সে খুশি টাকে মেনে নিতে পারিনি। কারন আমরা কেউ ই সে সময় বিয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। আমাদের বিয়ে নিয়ে আমাদের যত না স্বপ্ন ছিল, আমাদের ফ্যামেলি, বন্ধু বান্ধব, টিচার, কলিগদের আর ও বেশী স্বপ্ন  ছিল। কিন্তু মানুষ সব ই তার ইচ্ছা মত পাবে। এটা কি হয়। বিশাল পরিসরে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা না হলেও, আমরা সবার দোয়া নিয়ে শুরু করেছি আমাদের ভালবাসার ঘর।  আমার শ্বশুরের একটা কথা কখনো ভুলিনি। “অন্ধকারময় মেঘাচ্ছন্ন আকাশ দেখে ভয় পেয়ে পালিয়ে যেও না কারন এরপরই দেখবে রৌদ্রময় সোনালি আকাশ। “

২য় খন্ড

২০০৯  অক্টোবর  থেকে  ২০১৮ । সাংসারিক জীবনের নতুন নতুন অধ্যায়ের সূচনা পেরিয়ে ; আজকের এই আমরা নতুন অন্য এক অধ্যায়ে দাড়িয়ে আছি।১ম অংশে, এমন রোমান্টিক ভালবাসার গল্প পড়ে স্বাভাবিকভাবে কার ও মনে জানার আকাঙ্ক্ষা জাগতে পারে। এখন কেমন আছি আমরা ? এই দুটি মানুষের ভালবাসা আজ ও কি তেমন আছে? আজ ও কি সেই একই অনুভুতি কাজ করে?

সেই গল্পটা না হয় আমার পরের লেখনি তুলে ধরি।।শুধু এই টুকু বলি, ভালবাসা,,, ভালবাসে শুধু  তাকে  , “ভালবেসে ভালবাসা  বেঁধে যে রাখে”।

লেখক: ফারজানা পুষ্পিতা,নেদারল্যান্ডস থেকে।

Spread the love

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ



Design & Developed by Md Abdur Rashid, Mobile: 01720541362, Email:arashid882003@gmail.com