৩:৩৪ পূর্বাহ্ণ, অক্টো ১০, ২০১৭
প্রবাহ ডেস্ক:
ব্লু হোয়েল গেম নিয়ে আতঙ্ক বেড়েই চলেছে দেশে। অনেকেই অসম্পূর্ণ, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে বিভিন্ন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আতঙ্ক ও ভীতি সৃষ্টি করেছে। যার ফলে সুইসাইডাল চ্যালেঞ্জের এ গেমটি আরো প্রসার পাচ্ছে।
সম্প্রতি দেশে এক ছাত্রী আত্মহত্যা করার পর তার বাবা আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, সে ছাত্রী হয়তো ব্লু হোয়েল গেম খেলে আত্মহত্যা করেছে। তবে তার ব্লু হোয়েল গেম খেলার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সে ছাত্রীর আত্মীয়-স্বজনরা জানিয়েছেন, তার দেহে কোনো আঘাতের বা তিমির ছবি আঁকার চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
ব্লু হোয়েল গেম নির্মাতাদের মতে, দুর্বল মানসিকতার মানুষদের বেঁচে থাকার প্রয়োজন নেই। তাদের হত্যা না করে তারা নিজেরা যেন আত্মহত্যা করে সেই লক্ষ্যে সাজানো হয় ৫০ দিনের সুইসাইড চ্যালেঞ্জ। শুরুতে তারা মানসিকভাবে দুর্বল মানুষদের চিহ্নিত করে এ খেলাটির চ্যালেঞ্জগুলো পাঠাতে শুরু করে।
জানা যায়, রাশিয়ায় ইতিমধ্যে ১১৮ জন এ গেম খেলে আত্মহত্যা করেছে। পরবর্তীতে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিশ্বের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এ গেমের যেসব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে তার মধ্যে বেশ কিছু্ রয়েছে সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর। এ ধরনের কয়েকটি তথ্য তুলে ধরা হলো এ লেখায়।
ব্লু হোয়েল গেমের অ্যাপ অনলাইনে ব্লু হোয়েল গেমের অ্যাপ সম্পর্কে কিছু কথা প্রচলিত রয়েছে। অনেকেই বলছেন, একবার অ্যাপটি ইনস্টল করা হলে তা আর মুছবে না। এটাও ভুল তথ্য। কারণ প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, সব অ্যাপই মোছা সম্ভব।
তাহলে কিভাবে এ গেমটি চলছে? এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে এটি গেম নয়, মূলত কিছু দুষ্ট লোকের মাধ্যমে অসহায় বা দুর্বল একজনকে চালিত করা। আর এজন্য অন্য যেকোনো মেসেঞ্জার, ফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করবে তারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা পদচারণা করেন তারা এজন্য সহজেই এ গেমের শিকার হন।
আত্মহত্যায় বাধ্য করে একজন খেলোয়াড়ের সব তথ্য তারা নিয়ে নেয়। এরপর ব্ল্যাকমেইল করে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে- এমন তথ্য প্রায়ই পাওয়া যায়। যেমন একটি ধাপে নুড ছবি পাঠাতে বলে তারা। এতে ব্ল্যাকমেইল হতে পারে তবে এজন্য কেউ জীবন দিবে তা যুক্তিতে পড়ে না। তবে কেউ যদি আগে থেকেই আত্মহত্যাপ্রবণ থাকে তাহলে সে হয়তো প্ররোচণায় আত্মহত্যা করতে পারে।
স্বাভাবিক আত্মহত্যাকেই ব্লু হোয়েল বলে ধারণা অনেক তরুণ নানা কারণে আত্মহত্যা করে থাকে। তাদের এ আত্মহত্যার ঘটনাকে অনেকেই ব্লু হোয়েল খেলার পরিণাম বলে মনে করছেন। ফলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও বিষয়টি সেভাবে চলে এসেছে। তাই ব্লু হোয়েলের কারণে আত্মহত্যা করেছে বলে মনে করা ব্যক্তিদের অনেকেই হয়তো ভিন্ন কোনো কারণে আত্মহত্যা করেছে।
বেঁচে থাকাকে মূল্যহীন মনে করা এ গেমের মধ্যে প্রথমে সহজ কাজ দেওয়া হয়। পাঁচ মিনিট হাঁটা, মুভি দেখা – এমন সাধারণ কাজ থেকে শুরু করে হাত কাটা বা তেলাপোকা/বিড়াল/কুকুর হত্যা বা ছাদে দাঁড়ানোর মতো কাজ দেয়া হয়। এরপর খেলোয়াড়ের মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে কঠিন টাস্ক দেয়া হয়, যার মাধ্যমে তার বেঁচে থাকাকে মূল্যহীন মনে করে।
মৃত্যুর পর নতুন করে শুরু এ গেমের শেষ কয়েকটি ধাপ সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। ধারণা করা হয় অনেককে এভাবে ব্রেন ওয়াশ করা হয় যে, মৃত্যুর পর নতুন আরেকটি সুন্দর জীবনের শুরু হবে। জঙ্গিরাও একই কায়দায় আত্মঘাতী হামলাকারী তৈরি করে। ঠিক একই ধরনের প্রলোভনেই হয়তো অনেকে ব্লু হোয়েল গেমের শেষে আত্মহত্যা করে।
এছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, গেমটি খেলার পর আত্মহত্যা করেছে এমন মানুষের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। অনলাইনে যে সংখ্যাগুলো পাওয়া যাচ্ছে, তার কোনোটিই নির্ভরযোগ্য নয়। ফলে প্রতিবছর যে বিপুলসংখ্যক মানুষ আত্মহত্যা করে তাদের ব্লু হোয়েলের শিকার বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে কি না, তার অনুসন্ধানও গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র : দ্য হিন্দু
৫:২৭ অপরাহ্ণ, অক্টো ৩০, ২০২১
১:৪৮ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টে ৩০, ২০২১