৮:৫৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৪, ২০২৩
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।
জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর জসিম উদ্দিন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, জেলার রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চারকাছিয়া গ্রামের ওসমান গনি ছৈয়ালের ছেলে নুর মোহাম্মদ ছৈয়াল (৩৬), একই গ্রামের মৃত খোরশেদ মোল্লার ছেলে নোমান হোসেন (৩২) এবং চরলক্ষ্মী গ্রামের সেকান্দার সর্দারের ছেলে আবদুল্যা ওরফে জাইল্যা আবদুল্যা (৩৪)।
এদের মধ্যে রায়ের সময় নুর মোহাম্মদ ছৈয়াল ও নোমান হোসেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালত তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। অন্য আসামী পলাতক রয়েছে।
ভিকটিক নিশান সদর উপজেলার পশ্চিম লক্ষ্মীপুর গ্রামের আবদুল বারেক বেপারীর পালক ছেলে। তবে নিশান তার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে রায়পুর উপজেলার চরকাছিয়া গ্রামে বসবাস করতো।
২০১৯ সালের ৮ জানুয়ারি বিকেলে বাড়ির পাশের একটি পুকুর পাড় থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
দণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামী এবং ভিকটিম নিশান বন্ধু ছিলো। তারা একসাথে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করতো বলে পুলিশের তদন্তে উঠে আসে।
মামলার এজাহার ও পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৬ জানুয়ারি রাতে নিশান তার স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে ঘুমের প্রস্তুতি নেয়। রাত ১০ টার দিকে আসামী নুর মোহাম্মদ ও আবদুল্লাহ বাড়িতে এসে নিশানকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে যায়। তার স্ত্রী বিউটি আক্তার নিধেষ করলেও তিনি শোনেননি। ওই রাতে নিশান বাড়ি ফিরে না আসলে পরদিন তার স্ত্রী তাকে খোঁজ করে। দুইদিন পর ৮ জানুয়ারি বিকেলে বাড়ির পাশের একটি পুকুর পাড়ে নিশানের গলায় ফাঁস লাগানো গাছের সাথে বাঁধা মৃতদেহের সন্ধান পায় স্থানীয় লোকজন। পরে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করায়। এতে নিশানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রতিবেদন আসে।
এ ঘটনায় ৮ জানুয়ারি রায়পুর থানায় নুর মোহাম্মদ, নোমান হোসেন ও আবদুল্লাহর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ২/৩ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করে নিশানের স্ত্রী বিউটি আক্তার। পরে পুলিশ নুর মোহাম্মদ এবং নোমানকে গ্রেফতার করে।
শুরুতে রায়পুর থানাধীন হাজিমারা পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা মামলাটি তদন্ত করলেও পরে নোয়াখালী পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) হত্যা মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেয় আদালত।
২০২১ সালের ৩১ আগস্ট নোয়াখালী পিবিআইর পুলিশ পরিদর্শক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম আদালতে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন৷
এতে এজাহারে উল্লেখিত তিন আসামীকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়।
পিবিআইর তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভিকটিম নিশান এবং অভিযুক্ত আসামীরা পরস্পর বন্ধু। তাদের নির্দিষ্ট কোন পেশা ছিল না। মাদক সেবন, মাদক ব্যবসা, চুরি এবং অসামাজিক কার্যকলাপের সাথে তারা সম্পৃক্ত ছিল। নিশান তাদের পুকুর থেকে ১৫ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করে। ওই টাকা ভাগ এবং মাদক বিক্রির টাকার ভাগকে কেন্দ্র করে নিশানের সাথে আসামীদের মনোমালিন্য হয়। এর জের ধরে আসামীরা ক্ষিপ্ত হয়ে নিশানকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে। পরে ঘটনাকে ভিন্নখাতে নিতে তার মৃতদেহের গলায় চাদর পেঁছিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রাখে। তবে মৃতদেহের পা মাটিতে লাগানো ছিল। হত্যাকারীরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে নিশানকে হত্যা করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আদালত তদন্ত প্রতিবেদন এবং সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে তিনজনের যাবজ্জীবন সাজার রায় দেন।
১১:৩৮ পূর্বাহ্ণ, মে ১৩, ২০২৩