৬:০৩ অপরাহ্ণ, আগ ১৯, ২০২২
নিজস্ব প্রতিবেদক : লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে চাচা রুহুল আমিনের কাছে নিজের ওয়ারিশি সম্পত্তি দাবি করায় হামলার শিকার হতে হয়েছে মো. জুয়েল (২৪) নামে এক যুবককে। চাচাতো ভাইয়েরা তাকে মারাত্মকভাবে কুপিয়ে জখম করেছে। এতে তার হাতে ৩৩ টি সেলাই দিতে হয়। বর্তমানে সে ব্যাথার যন্ত্রণা নিয়ে দিন পার করছে।
ঘটনাটি রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের হাজিগঞ্জ এলাকায়।
জুয়েল বাংলানিউজকে জানায়, ৫ বছর বয়সে তার বাবা মো. জামালের মৃত্যু হলে সে এতিম হয়ে পড়ে। তার মাও অন্যত্র চলে যায়৷ পরে সে অন্যের আশ্রয়ে বড় হয়। তার পৈত্রিক সম্পত্তিগুলো তার চাচা রুহুল আমিন মাস্টারের দখলে ছিলো। বড় হয়ে সে তার চাচা রুহুল আমিনের কাছে তার পৈত্রিক সম্পত্তি দাবি করে। স্থানীয় শালিসদারের মাধ্যমে বৈঠকে বসলে বিভিন্ন দাগে এক একর ২৯ শতাংশ সম্পত্তির মালিক হয় জুয়েল। তবে ওই সম্পত্তি তাকে বুঝিয়ে দিতে বললে চাচার সাথে বিরোধ শুরু হয়।
গত ২৪ জুলাই সে একটি কৃষি জমিতে হালচাষ দিতে গেলে তার চাচা রুহুল আমিনের নেতৃত্বে চাচাতো ভাই মো. সোহাগ (৩০), মনোয়ার হোসেন সুমন (৩৮) ও দিদার হোসেন (৪৫) ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে আঘাত করে। এতে তার বাম হাতে মারাত্মক জখম হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে নোয়াখালীর একটি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখানে তার হাতের দুটি কাটা স্থানে ৩৩ টি সেলাই দিতে দিয়েছে। এ ঘটনায় রুহুল আমিনসহ ৫ জনের নামে আদালতে মামলা দায়ের করেন জুয়েল।
জুয়েল বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে আমার চাচা আমার পৈত্রিক সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে। আমি এতিম। এতিমের হক আত্মসাৎ এবং আমার উপর হামলার বিচার দাবি করছি।
রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে আরও বেশ কয়েকজন ভূক্তভোগী অভিযোগ করেছন তাদের জমি আত্মসাৎ করার।
রুহুল আমিনের বাড়ির মৃত সায়েদুল হকের ছেলে মিরাজ (৩৫) নামে এক যুবক অভিযোগ করেন, চর পোড়াগাছা, চর নেয়ামত ও চর বেদমা মৌজার ১৫ টি খতিয়ানে প্রায় এক একর সম্পত্তির মালিক তারা। কিন্তু ওই সম্পত্তিগুলো রুহুল আমিন তার দখলে রেখেছেন। সম্পত্তি দাবি করায় তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন রুহুল আমিন।
তাদের বাড়ির আবদুস সহিদ নামে আরেক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, ১৯৮৪ সালে তাদের ৬৪ শতাংশ জমি এওয়াজ বন্টন করেন রুহুল আমিন। কিন্তু এওয়াজকৃত জমি এখনো তাদের বুঝিয়ে দেননি তিনি।
একই বাড়ির প্রতিবন্ধী মাকু মিয়ার কাছ থেকে ১৯৮০ সালে ৯১ নম্বর খতিয়ানে ৬৪৩, ৬৪৪, ৬৪৫, ৬৪৬, ৬৪৮, ৬৪৯ ও ৬৪৭ নম্বর দাগে ২০ শতাংশ জমি ক্রয় করে ৪২ শতাংশ জমি দখলে নিয়েছেন রুহুল আমিন।
রুহুল আমিনের এমন ভূমি দস্যুতার বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠেছে স্থানীয় লোকজন। তবে স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় ভূক্তভোগীদের নানা হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। প্রভাব বিস্তার করে তিনি অন্যের জমিও তার কব্জায় রেখেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লেকজন।
অভিযোগ অস্বীকার করে রুহুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, জুয়েলের কোন জমি আমার দখলে নেই। সে মিথ্যা রটাচ্ছে।
জুয়েলকে কুপিয়ে জখমের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনাটি কিভাবে ঘটেছে আমরা জানি না। আমাদের নামে মিথ্যা মামলা করেছে সে।
তিনি বলেন, আমার কাছে যারা জমি দাবি করতেছে, তাদেরক আমি কাগজপত্র নিয়ে বসতে বলেছি। কাগজপত্রে পওনা হলে তাদের জমি বুঝিয়ে দেব। কিন্তু কেউ কাগজপত্র নিয়ে বসতেছেনা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) পলাশ কান্তি নাথ বলেন, জুয়েল নামে এক যুবকের উপর হামলার ঘটনা নিয়ে একটি মামলা রয়েছে। ঘটনাটি আমরা খুবই গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। এতে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে স্থানীয় লোকজনকে হয়রানি এবং ভূমি জবরদখলের বিষয়ে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।