১:৩৭ অপরাহ্ণ, জুলা ১৮, ২০২০
নিজস্ব প্রতিবেদক : লক্ষ্মীপুর পৌর বাস টার্মিনাল এলাকায় এক আতঙ্কের নাম খোরশেদ আলম ওরফে কসাই আলম। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, কৌশলে অন্যের জমি দখল, বাড়ি নির্মাণে চাঁদাদাবি, প্রতিবাদকারীদের উপর হামলা এবং হয়রানি এখন তাঁর নিত্য দিনের কাজ। তার অত্যাচারে অতিষ্ট হয়েছে এলাকার লোকজন। তবে ভয়ে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না কেউ।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, সাবেক জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালীদের সাথে সখ্যতা থাকায় দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কসাই আলম। কয়েকজনকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন আলম বাহিনী। কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে এ বাহিনীর সদস্যদের হাতে হেনস্তার শিকার হতে হয়।
জানা গেছে, পৌর সভার ৩, ৪ ও ১৫ নং ওয়ার্ডের সীমান্তবর্তী পৌর বাস টার্মিনাল এলাকার বাসিন্দা কসাই আলম। বাঞ্চানগর গ্রামের ঘাটলাবাড়ির আমানত উল্যার পুত সে। জেলা শহরের মাছ বাজারে তার মাংসের দোকান রয়েছে। এক সময় ফুটপাতের হকার ছিলো কসাই আলম। কয়েক বছরের ব্যবধানে তিনি অর্থ এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিতে পরিনত হয়েছেন।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাসাই আলম ওই এলাকার শিপন নামে এক প্রবাসীর প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের একটি বাড়ি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে। স্থানীয় বাবুল ভেন্ডার নামে এক ব্যক্তির ২০ শতাংশ জমি জাল দলিল তৈরী করে দখল করে নেন তিনি। এ নিয়ে আদালতে একটি মামলাও চলমান রয়েছে। এভাবে ওই এলাকার প্রায় ৫০ কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি দখল করার অভিযোগ রয়েছে কসাই আলমের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় একটি মসজিদের ভূয়া মোতোয়াল্লি সেজে মসজিদের সম্পত্তি নিজের দখলে রেখেছেন তিনি। যদিও ওই মসজিদের তিনি কোন জমি দান করেননি। উল্টো মসজিদকে পুঁজি করে বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন তিনি। মসজিদের নাম করে এলাকায় প্রায় ৭ একর সম্পত্তির উপর মামলা করেছেন। মামলার সুবাধে তিনি ওইসব জমি ভোগ দখল করে আসছেন।
এসব ঘটনার প্রতিবাদ করায় আলম বাহিনীর হাতে হামলার শিকার হতে হয়েছেন রাসেল নামে এক ফার্মেসী ব্যবসায়ীকে। রাসেল পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন মনছুর আলী ভূঁইয়া বাড়ির সাহাব উদ্দিনের ছেলে।
এলাকাবাসী জানায়, গত ৩০ জুন দুপুরে রাসেল স্থানীয় মসজিদে জোহরের নামাজ পড়তে গেলে আলম বাহিনীর সদস্যরা রাসেলের উপর হামলা করে। এ সময় দুই পক্ষের সমর্থিত লোকজনের সাথে সংঘর্ষে কসাই আলমও আহত হয়। তার মাথায় আঘাত লাগে। এ ঘটনার জের ধরে পুনরায় হামলার শিকার গতে হয়েছে রাসেলকে।
রাসেলের অভিযোগ, আলমের ছেলে তার ডান পায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এ সময় রাসেল বাড়িতেও হামলা করা হয়। এতে রাসেলের মা মঞ্জু বেগম ও তাদের বাড়ির রৌশন এবং রুমি নামে দুই নারী ও আরও তিনজন গুরুতর আহত হয়। এর মধ্যে দুই নারীর হাত ভেঙে দেয় হামলাকারীরা। পরে তারা জেলা সদর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেন।
ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, হামলার ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিলে হামলাকারীরা তাদের উপর আরও ক্ষিপ্ত হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেলে কসাই আলম বাহিনীর সদস্যরা রাসেলের ফার্মেসীতে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।
তবে হামলার বিষয়ে খোরশেদ আলম বলেন, রাসেল ও তার পরিবরের লোকজন আমার উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। এতে আমার মাথা ফেটে যায়। পরবর্তীতে রাসেলদের উপর হামলার বিষয়টি আমি জানি না। রাসেলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা রাসেলের সাজানো নাটক। সে নিজেই ভাঙচুর করেছে। আমাদের কাছে মোবাইলে ধারনকৃত ভিডিও চিত্র আছে।’
সামান্য হকার থেকে সম্পদশালী
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে আলম ছিলেন একজন হকার। জেলা শহরের ফুটপাতে এক টাকা দামের দিয়াশলাই ও ৫ টাকা দামের লাইটার বিক্রি করতে আলম। এর পর কর্মচারী হিসেবে কাজ নেয় মাংসের দোকানে। পরবর্তীতে নিজেই কসাইগিরি করে এবং মাংসের ব্যবসা শুরু করে। এলাকার প্রভাবশালীদের ফ্রি মাংস সরবরাহ করে তাদের হাত করে শুরু করে অপকর্ম। জমি দখল, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে নানান অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত কসাই আলম। সখ্যতা গড়ে তোলেন তার ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা লোকমান কমিশনারের সাথে।
গত বিএনপি সরকারের আমলে লোকমান কমিশনারের আর্শিবাদে বিভিন্ন মানুষকে হয়রানি করেন তিনি। একই সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেন লোকমান কমিশনারের বড় ভাই সাহাব উদ্দিন, হারুন, বোরহানসহ স্থানীয় প্রভাবশালীদের। আলম তার আত্মীয়দের নিয়ে গড়ে তোলের আলম বাহিনী। কারো সাথে কোন ঝামেলা হলে এ বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজনের উপর হামলা চালান তিনি। এ বাহিনীর অন্যতম সদস্যরা হলেন, আলমের ভাতিজা রবিন, ভাগিনা দিদার, আরিফ, রাজু, আহসান, রশিদ ও ভগ্নিপতি মিয়াসহ অনেকে।
জানা গেছে, পৌর বাস টার্মিনাল এলাকায় ৭ একর জমি নিয়ে মামলা করেন কসাই আলম। ওয়ার্কফ প্রশাসনের নামে এ মামলাটি করেন তিনি। কিন্তু এতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন অনুমোদন নেননি আলম। এ মামলাকে কেন্দ্র করে তিনি এলাকায় চাঁদাবাজি ও জমি দখলে মেতে উঠেছেন। মামলার অজুহাত দিয়ে ওই জমিগুলো নিজের জিম্মায় রেখেছেন তিনি। কেউ ওই এলাকায় জমি ক্রয় করতে আসলে জমিতে ঝামেলা আছে বলে প্রকৃত ক্রেতাদের তাড়িয়ে দেন তিনি। পরে কৌশলে তিনি আত্মীয়ের নামে জমি কমমূল্যে কিনে নেন।
এছাড়া ওই জমির প্রকৃত মালিকরা কোন স্থাপনা করতে গেলে মামলা থাকার অজুহাত দিয়ে কাজে বাধা দেন কসাই আলম। ফলে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেন তিনি। স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে বিষয়টি রফাদফা করে তাদের চাঁদা দিয়ে স্থাপনার কাজ করতে হয়। পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন বাবুল ভেন্ডার নামে এক ব্যক্তির চাদ ঢালাইয়ের কাজ বন্ধ করে দেন তিনি। পারে চাঁদা দিয়ে তিনি কাজ সম্পন্ন করান।
এতোসব অপকর্ম করেও পার পেয়ে যান কসাই আলম। জানা গেছে, প্রভাবশালীদের হাত করেন কসাই আলম। এলাকাবাসীকে দেখানো জন্য বাড়িতে দাওয়াত করে ঢেকে এনে তাদেরকে ভুঁড়িভোজ করান তিনি। ফলে তাদের দেখে এলাকার লোকজন ভীত হয়ে পড়ে। এটাকেই পুঁজি করেন তিনি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে থানায় কোন অভিযোগ গেলে ম্যানেজ করে ফেলেন কসাই আলম। পরিবারের নারী সদস্যদের দিয়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানো চেষ্টা করে আলম।
অভিযোগ রয়েছে, বড়িতে মাঝে মধ্যে গভীর রাতে পার্টি দেওয়ার নাম করে লোক জড়ো করান তিনি। সেখানে বেশিরভাগ বখাটেদের নিয়ে এসে বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপের আসর বসানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এলাকায় বিস্তৃর্ণ স্থানজুড়ে কসাই আলম মার্কেট এবং গ্যারেজ নির্মাণ করেছেন। যদিও ওই জমিগুলো নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এসব বিষয়ে প্রকাশ্যে আলমের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে রাজি নন। অনেকটা আতঙ্ক বিরাজ করতে দেখা গেছে এলাকাবাসীর মধ্যে। তবে প্রকাশ্যে না হলেও অপ্রকাশ্যে এস বেশ কয়েকজন তার কর্মকান্ড নিয়ে অভিযোগ করেছেন। তারা আলমের অবৈধ রাজত্ব বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
অভিযোগের বিষয়ে খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমি এলাকার একটি মসজিদের দায়িত্বে আছি। মসজিদের উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে কথা বলায় রাসেলেরা আমার উপর হামলা করেছে। এ বিষয়ে আমি থানায় অভিযোগ দিয়েছি। সেটাকে ভিন্নখাতে নিতে একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আমি অন্যকারো জমি জোরপূর্বক দখল করিনি। জমির প্রকৃত মালিকগণ আমার আত্মীয়দের কাছে জমগিুলো বিক্রি করেছে। সেগুলো আমি দেখভাল করি। আমি ব্যবসা করে খাই। এলাকায় প্রভাব বিস্তার বা চাঁদাবাজির অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।’
৯:৩২ অপরাহ্ণ, জানু ১৮, ২০২১
৯:২০ অপরাহ্ণ, জানু ১১, ২০২১