• ঢাকা,বাংলাদেশ
  • শুক্রবার | ২রা জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | গ্রীষ্মকাল | ভোর ৫:৩০
  • আর্কাইভ

শিশুর আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে আপনিই বড় বাধা !

৭:২৯ অপরাহ্ণ, মে ০৬, ২০১৯

প্রবাহ অনলাইন :

আপনি আপনার বাচ্চাকে আদর করেন ভালোবাসেন নিসন্দেহে। কিন্তু কিছু মা আছেন তার বাচ্চাকে এত ভালোবাসেন যে, এক গ্লাস পানিও তুলে খেতে দেন না। আপনি মাতৃস্নেহে অতিরিক্ত অন্ধ হয়ে যান।পক্ষান্তরে আপনি দিন দিন বাচ্চার সাবলম্বী হওয়ার পথই বন্ধ করে দিচ্ছেন।পরনির্ভরশীল করে তুলছেন । তাকে আপনি আত্নবিশ্বাসী করার পরিবর্তে কুড়ে,অলস,ও অহংকারী করে তুলছেন।অঙ্কুরে বিনষ্ট করছেন তাকে, তাই আপনার শিশুর আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে আপনিই বড় বাধা।

শিশুদের শৈশব-কৈশরে কিভাবে আত্ননির্ভরশীল ও আত্নবিশ্বাসী এবং পরোপকারী হবে সেসব বিষয়ে কিছু লিখছি।

১.শিশু বয়সেই আপনার শিশুর বই- খাতা,জামা কাপড়, খেলনা সামগ্রী, স্কুলব্যাগ, পড়ার টেবিল গুছাতে বলবেন,করতে না চাইলে চাপ দিবেন,প্রয়োজনে মৃদু কর্কশ ভাষায় কথা বলবেন।

২.বাইরে কোথাও বেড়াতে যাবার আগে তার           জামা-কাপড় নির্বাচন করার দায়িত্ব তাকে দেন।কি কি নিতে হবে তাকে তালিকা করতে বলুন।আপনি শুধু গুছানোর পর সর্বশেষ একবার দেখে নিবেন।

এতে করে আপনার শিশু আত্নবিশ্বাসী ও আত্ননির্ভরশীল হবে।

৩.কোন সামাজিক অনুষ্ঠান বিয়ে- জন্মদিন,মৃত ব্যক্তির বাড়ি যাওয়াতে,হাসপাতালে রোগী দেখতে গেলে আমরা কি ধরনের পোশাক পরবো  তাকে ধারনা দিন, তার সাথে আলোচনা করুন।এরপর তাকে পোশাক নির্বাচন করতে দেন।দেখবেন নিজেই অনুষ্ঠান অনুযায়ী নিজেই পোশাক নির্বাচন করতে পারবে।

৪.শিশুকে নিজের হাতে খেতে অভ্যাস করুন।এছাড়া খাবার খাওয়ার সময় শুধু মাংস ও বড় মাছ না খাইয়ে ছোটমাছ শাক সবজি খাওয়ার প্রতি গুরুত্ব দিন।আপনি তাকে শৈশব থেকেই শাক সবজি উপকারিতা বোঝান।দেখবেন সে নিজে থেকেই খাবে।খাওয়ার টেবিলে তাকে খাবার প্লেট তুলে দিবেন না।সে কোন খাবার খাবে তা বাছাই করার দায়িত্ব তাকে দিন।তেমনি সামাজিক অনুষ্ঠানে নিজ হাতে খাবার খেতে দেন।এসব অনুষ্ঠানে বাচ্চারা কম বেশি যা খায় তাতে সন্তষ্ট থাকুন।আপনি তাকে বকাঝকা করলে সে লজ্জ্বা পায়।তার আত্নসম্মানে আঘাত লাগে।

৫.শিশুদের দামী ও বিদেশী ফলমূলের প্রতি অাকৃষ্ট না করে তাকে দেশীয় ফলমূলের গুরুত্ব বোঝান। তাকে প্রত্যেক মৌসুমের মৌসুমী ফলের প্রতি আকৃষ্ট করুন।এসব ফলমূলে ভিটামিন ও মিনারেল ভরপুর তা বোঝাতে হবে।

যেমন: গাব,পেয়ারা,আমলকি ,কামরাঙ্গা, আখ,তাল,ডাব,বরই,আম,কাঁঠাল,জাম,পেয়ালা,চালতা ইত্যাদি।

৬.ছোটবেলা থেকেই আপনার শিশুকে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।বিভিন্ন অনুষ্ঠান,জন্মদিনে তাকে অন্য উপহারের পরিবর্তে বই উপহার দিন।এতে করে শৈশবে আপনার সন্তান পড়ুয়া,জ্ঞানী,বাস্তবজ্ঞান  সম্পন্ন হবে।আর বই এর চাইতে অকৃত্রিম বন্ধু আর কেউ হতে পারে না।

৭.শিশুকে সপ্তাহে অন্তত একদিন  মাঠে খেলাধূলা করতে।আজকের দিনে আমরা নানারকম ভয়ে বাচ্চাদের ভার্চুয়াল দুনিয়ায় খেলাধূলা করতে দিয়ে থাকি।কিন্তু এতে করে আমাদের শিশুদের শৈশব হারিয়ে যাচ্ছে।এছাড়া আপনার শিশুকে নদীর পাড়,কাশবন,বৃষ্টি- রংধনু এসব দেখাতে পারেন।এতে করে প্রকৃতিকে জানবে চিনবে।

৮.ছুটির দিনে বাজারে নিয়ে যেতে পারেন।সেখানে গিয়ে মাছ, শাকসবজি সম্পর্কে সম্যক ধারনা অর্জন করবে।দেশীয় মাছ ও শাকসবজি এবং দেশীয় ফলমূল সম্পর্কে জানবে।বাজার করার অভিজ্ঞতা তৈরি হবে।

৯.আপনার শিশু আপনার আচরন অনুকরন ও অনুসরন করে।আপনি তার প্রথম শিক্ষক।সুতরাং সাধু সাবধান।আপনি কখনো শিশুর সম্মূর্খে কারও সাথে খারাপ আচরন করবেন না।বাড়িতে কোন মেহমান এলে হাসিমুখে বরন করবেন।শিশুকেও মেহমানের সাথে ভালো আচরন করতে বলবেন।মেহমানের সুবিধা- অসুবিধা দেখতে বলবেন।তাকে বোঝাবেন মেহমান আল্লাহর রহমত।মেহমানের সাথে ভালো আচরন করা উচিত।

১০.বাড়িতে ঢুকতে ও বের হওয়ার সময় সালাম দিতে বলবেন।এছাড়া পাড়া প্রতিবেশি, বাড়ির কাজের লোক,দারোয়ান,ড্রাইভার সবার সাথে সালাম ও কুশল বিনিময় করতে বলবেন।

১১.আপনার কন্যাসন্তানের বয়ঃসন্ধি এর পূর্বে তাকে ধারনা দিন।ঋতুকালীন সেবা ও পরামর্শ  আগে থেকে জানা থাকলে আপনার কন্যা শিশু ঐ সময়ে স্বাভাবিক ও সাবলীল থাকবে।এছাড়া কন্যাশিশুকে পারিপার্শ্বিক  ব্যাপারে পূর্ব থেকেই জ্ঞাণ প্রদান করবেন।বিভিন্ন প্রকার দূর্ঘটনা ও যৌন নিপীড়ন  এড়াতে আপনি তার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন।

১২.শিশুর সৃজনশীল  বিকাশে বাধা দিবেন না।দিনের একটা সময় তাকে তার মনের মত কাজ করতে দিন!দেখবেন পরবর্তী সময়গুলোতে সে আপনাকে দশগুন কাজ করে দিবে।তার পড়াশুনায় আরও মনোযোগী হয়ে উঠবে।

পরিশেষে বলবো আপনি আপনার সন্তানের একজন পরম বন্ধু হওয়ার চেষ্টা করুন।সে যেন আপনাকে ভরসা করতে পারে।পৃথিবীর প্রত্যেক শিশুর পথচলা চলা হোক নিরাপদ। শিশুরা হোক আত্ননির্ভরশীল ও আত্নবিশ্বাসী।

লেখক : ফাতেমা-তুজ-জোহরা (মনিকা ),উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী।

Spread the love

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ



Design & Developed by Md Abdur Rashid, Mobile: 01720541362, Email:arashid882003@gmail.com